বান্দরবানের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সুভাষ ছড়াচ্ছে পাকা আনারসের মিষ্টি গন্ধ। জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি সদরসহ চিম্বুক এলাকার প্রতিটি পাহাড়ের ঢালে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস। আকারে বড়, রসালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে এখানকার আনারস। ফলন ভালো ও বেশি বিক্রি হওয়াতে খুশি পাহাড়ের চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালে ভাঁজে ভাঁজে শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস। রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি সদরের চিম্বুক লাইমিপাড়া, ফারুক পাড়া শৈলপ্রপাতসহ সব পাহাড়ে এখন একই চিত্র। পাকা আনারসে ছেয়ে আছে পাহাড়। এসব আনারস বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজার ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা বাগানে গিয়ে আনারস ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গা পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
পাহাড়ে উৎপাদিত এসব জায়ান্ট কিউ আনারস আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে বেশ ভাল। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
চাষিরা জানান, প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ে জমি প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা। মে-জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয় আনারস। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হন তারা।
লাইমি পাড়া এলাকার আনারস চাষি পাকসিয়াম বম বলেন, ‘এ বছর আনারসের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আমাদের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস অন্যান্য জেলার আনারসের চেয়ে অনেক ভালো। খুবই মিষ্টি, রসালো ও আকারে বড় হওয়ায় পাইকাররা বাগানে এসে ভালো দামে আনারস ক্রয় করে নিয়ে যায়। আমাদের বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পর্যটকরা আসে, অনেকে খায় আবার বাড়িতেও নিয়ে যায়।
ফারুক পাড়া এলাকার আরেক কৃষক সানতোয়াল বম বলেন, ‘এ বছর ছয় একর জমিতে আনারসের বাগান করেছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কিছু চাষের চাইতে আনারস চাষে পরিচর্যা তেমন একটা না করলেও চলে। অনেক সময় একই জমিতে দুইবার ফলন পাওয়া যায়। এতে করে স্বল্প পরিশ্রম ও ব্যয়ে আমরা অধিক লাভবান হতে পারছি।’
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক এম এম শাহনেওয়াজ বলেন,
যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় সেক্ষেত্রে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বিগত বছর জেলায় তিন হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন আনারস। চলতি বছর তিন হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে, এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন।