“যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদেরকে গুম, গ্রেপ্তার, খুনও করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ নাও থাকে একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন।”
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান এবং মঙ্গলবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার দুপুর পৌনে ২টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি সেখানে বলেন, সোমবার ‘শহীদ স্মরণে’ সারাদেশে নিহতের স্থানগুলোতে শহীদ স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হবে।
ঢাকায় বেলা ১১টায় শাহবাগে শ্রমিক সমাবেশ এবং বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ হবে। পাশাপাশি সারাদেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার ‘ছাড়তে হবে ক্ষমতা, ঢাকায় আসো জনতা’ স্লোগানে সারাদেশের ছাত্র, নাগরিক ও শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়ে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ।
সেদিন দুপুর ২ টায় আন্দোলনকারীদের শাহবাগে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে নাহিদ বলেন, “সকল এলাকায়, পাড়ায়, গ্রামে, উপজেলা, জেলায় ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন।
“যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদেরকে গুম, গ্রেপ্তার, খুনও করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ নাও থাকে একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।”
সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনকটি এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আহ্বান উপেক্ষা করে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো যোগ দিয়েছে। সঙ্গে আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি মিছিলের ডাক দিয়ে রেখেছে।
অসহযোগের মধ্যে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে সংঘর্ষ এবং হতাহতের খবর এসেছে। মুন্সীগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ছাত্রদল নেতার নিহতের খবর এসেছে মাগুরা থেকেও।
স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ
এদিকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে শাহবাগে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎসভবন, কাঁটাবন ও টিএসসি এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার বেলা ১১টা থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশের ডাক দিয়েছিল আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাতে সাড়া দিয়ে বেলা সাড়ে ১০টার দিকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে শাহবাগ মোড় দখল করে বিক্ষোভ শুরু করেন পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে আসা একদল শ্রমিক।
এসময় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। আগুন দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বেশ কয়েটি গাড়িতে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ফায়ার সার্ভিস এসে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ব্যয় করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে বেলা ১১টার পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশ্রগহণে শাহবাগ মোড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎস্যভবন, কাঁটাবন ও টিএসসি এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েন।
বিক্ষোভে তারা ‘দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার শেখ হাসিনা গদি ছাড়’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান’, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি রোববার রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কর্মসূচি সফল করতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, পেশাজীবি, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানানো হয়।