ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈদযাত্রার ভোগান্তি কম: সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলো সুফল দিতে শুরু করেছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এখন যেগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে, এতে জনসাধারণের ভ্রমণের সময় কমছে, দূর হচ্ছে পথের ভোগান্তি। একইসাথে কমছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। তাঁর দুদিন আগেই রবি ও সোমবার ছুটি পান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নাজমুস সাকিব। ছুটি নিয়ে রোববার দুপুরেই গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহান উদ্দিনে পৌছে ইফতার করেন পরিবার নিয়ে। পদ্মাসেতু হওয়ার সুবাদেই এবারের ঈদযাত্রাটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রমী হয়েছে সাকিবের।

নাজমুস সাকিব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “এবারে ঈদের জার্নি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে সময় লেগেছে তিনঘন্টা আর বরিশাল থেকে ভোলা আসতে এক ঘন্টার মতো। চার ঘন্টায় ঢাকা থেকে ভোলাতে আসতে পেরেছি– এটা ভেবেই অবাক লাগছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার আগে ৮-১০ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো।”

কেবল ঈদযাত্রাতেই নয়, পদ্মাসেতুর কল্যাণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বের ২১ জেলায় সাধারণ সময়েও সড়কপথে ভ্রমণ হয়েছে স্বাচ্ছন্দ্যের। দুই বছর আগেও ফেরিঘাটে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হতো এই অঞ্চলের যাত্রীদের। সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার অবসান করেছে পদ্মাসেতু।

গতবছরও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পারাপারের কিছু পয়েন্টে যে যানজট অন্তহীন বলে মনে হচ্ছিল, এবার তেমন পরিস্থিতি নেই।

ঈদের আগে সিরাজগঞ্জে আটটি ওভারপাস ও দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করায়– নির্বিঘ্ন হয়েছে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ঈদযাত্রা। এসব অবকাঠামো হচ্ছে ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পের অংশ। হাটিকুমরুলে একটি ইন্টারচেঞ্জসহ আরও ফ্লাইওভার, ওভারপাস এবং ব্রিজ থাকবে। রাস্তার নকশার কারণে দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে হাটিকুমরুলের কুখ্যাতি ছিল, পরে এই নকশায় সংশোধন আনা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “এখানে তিনটি ওভারপাস ও একটি ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে, এতে ঈদের ছুটিতে উত্তরের পথে যানবাহন চলাচল আরও অনেক বেশি সহজ হয়েছে।”

ঢাকা থেকে সোমবার সকালে রওনা দিয়ে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় রংপুরে পৌঁছে যাওয়া মহসিন রেজা টিবিএসকে বলেন, “বাসে এবারের মতো এতোটা স্বস্তির যাত্রা স্বাভাবিক সময়েও করতে পারিনি। পুরো রাস্তার কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি। দুপুরের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গিয়েছি।”

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পটি — দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক)-২ করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে-২ বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর-৪ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

গত ৬ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এসব ওভারপাস ও দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। একইদিন টোল আদায় দ্রুত করতে নবনির্মিত ছয় লেনের মেঘনা সেতুর দ্বিতীয় টোল প্লাজা উদ্বোধন করেন সেতুমন্ত্রী।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতী সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল বুথ স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সড়কের প্রকল্পগুলো সুফল দিচ্ছে

২০১৮ সালের ঈদের আগে ফেনীতে একটি রেলওয়ে ওভারপাস আংশিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল– যা ওই বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটাই দূর করে। ওই বছরেই ফেনীতে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে বিদ্যমান সেতুগুলোর পাশাপাশি নির্মিত হয় দ্বিতীয় মেঘনা, গোমতী এবং কাঁচপুর সেতু। এসব উদ্যোগ দক্ষিণপূর্বের ১০টি জেলায় ঈদযাত্রাকে সহজ করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এখন যেগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে, এতে জনসাধারণের ভ্রমণের সময় কমছে, দূর হচ্ছে পথের ভোগান্তি। একইসাথে কমছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু, ১৯ হাজার কোটি টাকার এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প ছাড়াও গত দেড় দশকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর এবং ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প।

মেট্রোরেল, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভারগুলো রাজধানী ঢাকায় যান চলাচলকে আরও সহজ করে তুলেছে। এসব অবকাঠামো ব্যবহার করে দ্রুত বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যেতে পারছে ঈদযাত্রীরা।

অবকাঠামোর বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও– ঢাকার গড় যান চলাচলের গতি তাতে বাড়েনি। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই রাজধানীতে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথগুলোয় দীর্ঘ যানজট ঘটছে।

কিছু প্রকল্পের সম্প্রসারণের কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে পড়া এসব প্রকল্পের কারণে – সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোর পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না জনগণ। যেমন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নবীনগর থেকে চন্দ্রার মধ্যবর্তী সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ চলছে, একারণে প্রায়ই এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়।

ঈদকে সামনে রেখে শিল্পনগরী গাজীপুরের অধিকাংশ শিল্প কারখানা সোমবার (৮ এপ্রিল) থেকে ছুটি ঘোষণা করে। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে বেতন-বোনাস পেয়েই দ্রুত দেশের বাড়ি ফেরার গাড়ি পেতে মহাসড়কে আসে বহু শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। এতে গাজীপুর ও চন্দ্রার কিছু পয়েন্টে যানজট দেখা দেয়।

মহাসড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের শিথিলতা এবং হঠাৎ করেই ঈদযাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ায় এমনটা হয়েছে। তবে যানজট দূর করে যান চলাচলের গতি বাড়াতে তাঁরা তৎপর আছেন বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

টিকেট নিয়ে ভোগান্তি কী দূর হয়েছে?  

সোমবারের ট্রেনে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন ফাহিমা বেগম। সাথে তার পরিবারের তিন সদস্য। ফাহিমা আগেই অনলাইনে সোমবারের ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন।

ট্রেনে ওঠার আগে সোমবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সাথে। টিবিএসকে তিনি বলেন, “ট্রেনের টিকিট কাটতে আগে ঘন্টার পর ঘন্টা– এমনকি ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু, এবারে সেই ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। অনলাইনেই টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি এবং কমলাপুর রেল স্টেশনেও খুব বেশি ভিড় নেই। আশা করি সঠিক সময়েই ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে।”

শুধু দক্ষিণবঙ্গের নাজমুস সাকিব, কিংবা উত্তরবঙ্গের ফাহিমা বেগমই নয়– এবারের ঈদ ভ্রমণ দেশের সকল প্রান্তের মানুষের জন্যই অনেকটাই ঝঞ্ঝাট-মুক্ত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহাসড়কগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং বিশেষ করে দক্ষিণের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পদ্মাসেতু মানুষের ঈদ যাত্রার ভোগান্তি কমিয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকার সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকতো। এর ফলে লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠতো, এমনও হতো লঞ্চের খোন্দলে (মালামাল রাখার জায়গা) যাত্রীতে ভরে যেত। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল লঞ্চ চলাচল।

আর পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চের যাত্রী কমেছে। সড়কপথে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় বরিশালে পৌঁছাতে পারায় অধিকাংশ মানুষ সড়কপথেই বাড়ি যাচ্ছে।

পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদের কিছুটা আগে আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেওয়া, রোস্টার চালুর মাধ্যমে গার্মেন্টসগুলোর ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ায় আরও নির্বিঘ্ন হচ্ছে ঈদযাত্রা। এছাড়া ঈদের সময়ে রাস্তায় পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা এবং তদারকিও মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা ও যানজট কমিয়েছে।

সোমবারে যাত্রাপথের পরিস্থিতি যেমন ছিল

আগের বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় তেমন ভোগান্তি হয়নি বলেই জানান সড়কের যাত্রীরা। সোমবার পর্যন্ত ট্রেনের উল্লেখযোগ্য কোনো বিলম্বের ঘটনাও জানা যায়নি। অন্যদিকে, এবার লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়লেও, এখন পর্যন্ত তেমন ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও বড় ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়নের ফলে এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছেন। এমনকি ব্যাপক যানজটের জন্য পরিচিত চন্দ্রা মোড়েও যানবাহনের চাপ বাড়লেও– তুলনামূলকভাবে যানজটমুক্ত ছিল।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদযাত্রায় চন্দ্রা মোড়ে যানজট নেই, এ যেন অবিশ্বাস্য। প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সরব উপস্থিতির কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব খান বলেন, “চন্দ্রার কাছে মহাসড়কে তিন শিফটে এক হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশেষ কারণ ছাড়া চন্দ্রার কয়েক কিলোমিটার সড়কে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাইল, সাভার ও নবীনগর থেকে আসা বাস চন্দ্রা এলাকা পার হয়ে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে।”

এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারের দুই লেনের সড়ক নিয়ে সবার দুশ্চিন্তা থাকলেও এতে যান চলাচলে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার কথা জানা যায়নি।

যাত্রীরা জানান, টাঙ্গাইল অংশের মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজট পাননি তাঁরা। চিরচেনা যানজোটের মহাসড়ক এবার ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিয়েছে। তবে আরও দুইদিন বাকি রয়েছে ঈদের। এই সময়টাও সড়ক যানজট মুক্ত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তাঁরা।

বগুড়াগামী এক বাসচালক মঈন টিবিএসকে বলেন, “ঈদের আগে এই সময় মহাসড়কে ব্যাপক যানজট থাকতো। কিন্তু, সড়ক উন্নয়ন আর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবার যানজটমুক্ত। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর আশরাফ বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। স্বাভাবিক গতিতেই পরিবহনগুলো চলাচল করছে মহাসড়কে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও কোনো ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রুটের যাত্রীরাও।

অন্যদিকে, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীচাপ বেড়েছে। তবে ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে রওনা হতে পেরে খুশি অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রীরা।

জানা যায়, গতকাল নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস-সহ দুয়েকটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গেছে। এছাড়া, নৌপথে ঈদযাত্রার শুরুর দিকে যাত্রী না থাকলেও, এখন কিছুটা বেড়েছে। সকালের দিকে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি লঞ্চ ৬০০ যাত্রী নিয়ে ভোলার ইলিশার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

চাঁদপুরসহ কাছাকাছি বিভিন্ন নৌরুটের লঞ্চগুলোও যাত্রী নিয়ে ছেড়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, হুলারহাট, বরগুনা, রাঙ্গাবালী, চরমন্তাজ রুটের লঞ্চগুলো টার্মিনালে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা লঞ্চে উঠে পড়েছেন। সব লঞ্চ নির্দিষ্ট সময়ে ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রীচাপ বাড়লে– সে অনুসারে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনাও কমেছে:

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১৫ দিনে দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়, আর আহত হন ৫৬৫ জন।

সংগঠনটির পরিসংখ্যান মতে, ২০২২ সালের রোজার ঈদের তুলনায় গত ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে ১৮.২০ শতাংশ, আর প্রাণহানি ২১.১০ শতাংশ এবং আহত ৩৩ শতাংশ কম হয়েছে।

সংগঠনটি বলছে, গত ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৩৪১টি দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জন নিহত এবং ৬২০ জন আহত হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের পরিস্থিতি এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গত ঈদে দুর্ঘটনা কম হয়েছে, এবারের ঈদেও দুর্ঘটনা কম হতে পারে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৫ হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষ। বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনা-জনিত জিডিপির ক্ষতি ৫.৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হয়। আর সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ।

ঈদযাত্রার ভোগান্তি কম: সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলো সুফল দিতে শুরু করেছে

আপডেট সময় : ১২:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল ২০২৪

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এখন যেগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে, এতে জনসাধারণের ভ্রমণের সময় কমছে, দূর হচ্ছে পথের ভোগান্তি। একইসাথে কমছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। তাঁর দুদিন আগেই রবি ও সোমবার ছুটি পান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নাজমুস সাকিব। ছুটি নিয়ে রোববার দুপুরেই গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহান উদ্দিনে পৌছে ইফতার করেন পরিবার নিয়ে। পদ্মাসেতু হওয়ার সুবাদেই এবারের ঈদযাত্রাটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রমী হয়েছে সাকিবের।

নাজমুস সাকিব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “এবারে ঈদের জার্নি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে সময় লেগেছে তিনঘন্টা আর বরিশাল থেকে ভোলা আসতে এক ঘন্টার মতো। চার ঘন্টায় ঢাকা থেকে ভোলাতে আসতে পেরেছি– এটা ভেবেই অবাক লাগছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার আগে ৮-১০ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো।”

কেবল ঈদযাত্রাতেই নয়, পদ্মাসেতুর কল্যাণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বের ২১ জেলায় সাধারণ সময়েও সড়কপথে ভ্রমণ হয়েছে স্বাচ্ছন্দ্যের। দুই বছর আগেও ফেরিঘাটে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে হতো এই অঞ্চলের যাত্রীদের। সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার অবসান করেছে পদ্মাসেতু।

গতবছরও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পারাপারের কিছু পয়েন্টে যে যানজট অন্তহীন বলে মনে হচ্ছিল, এবার তেমন পরিস্থিতি নেই।

ঈদের আগে সিরাজগঞ্জে আটটি ওভারপাস ও দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করায়– নির্বিঘ্ন হয়েছে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ঈদযাত্রা। এসব অবকাঠামো হচ্ছে ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পের অংশ। হাটিকুমরুলে একটি ইন্টারচেঞ্জসহ আরও ফ্লাইওভার, ওভারপাস এবং ব্রিজ থাকবে। রাস্তার নকশার কারণে দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে হাটিকুমরুলের কুখ্যাতি ছিল, পরে এই নকশায় সংশোধন আনা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “এখানে তিনটি ওভারপাস ও একটি ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে, এতে ঈদের ছুটিতে উত্তরের পথে যানবাহন চলাচল আরও অনেক বেশি সহজ হয়েছে।”

ঢাকা থেকে সোমবার সকালে রওনা দিয়ে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় রংপুরে পৌঁছে যাওয়া মহসিন রেজা টিবিএসকে বলেন, “বাসে এবারের মতো এতোটা স্বস্তির যাত্রা স্বাভাবিক সময়েও করতে পারিনি। পুরো রাস্তার কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি। দুপুরের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গিয়েছি।”

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পটি — দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক)-২ করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে-২ বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর-৪ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

গত ৬ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এসব ওভারপাস ও দুটি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। একইদিন টোল আদায় দ্রুত করতে নবনির্মিত ছয় লেনের মেঘনা সেতুর দ্বিতীয় টোল প্লাজা উদ্বোধন করেন সেতুমন্ত্রী।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতী সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল বুথ স্থাপনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

সড়কের প্রকল্পগুলো সুফল দিচ্ছে

২০১৮ সালের ঈদের আগে ফেনীতে একটি রেলওয়ে ওভারপাস আংশিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল– যা ওই বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটাই দূর করে। ওই বছরেই ফেনীতে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ২০১৯ সালে বিদ্যমান সেতুগুলোর পাশাপাশি নির্মিত হয় দ্বিতীয় মেঘনা, গোমতী এবং কাঁচপুর সেতু। এসব উদ্যোগ দক্ষিণপূর্বের ১০টি জেলায় ঈদযাত্রাকে সহজ করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোয় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, এখন যেগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে, এতে জনসাধারণের ভ্রমণের সময় কমছে, দূর হচ্ছে পথের ভোগান্তি। একইসাথে কমছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু, ১৯ হাজার কোটি টাকার এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প ছাড়াও গত দেড় দশকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর এবং ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকার কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প।

মেট্রোরেল, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, এক্সপ্রেসওয়ে এবং ফ্লাইওভারগুলো রাজধানী ঢাকায় যান চলাচলকে আরও সহজ করে তুলেছে। এসব অবকাঠামো ব্যবহার করে দ্রুত বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে যেতে পারছে ঈদযাত্রীরা।

অবকাঠামোর বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও– ঢাকার গড় যান চলাচলের গতি তাতে বাড়েনি। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই রাজধানীতে প্রবেশ ও প্রস্থানের পথগুলোয় দীর্ঘ যানজট ঘটছে।

কিছু প্রকল্পের সম্প্রসারণের কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে পড়া এসব প্রকল্পের কারণে – সড়কের মেগাপ্রকল্পগুলোর পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না জনগণ। যেমন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নবীনগর থেকে চন্দ্রার মধ্যবর্তী সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজ চলছে, একারণে প্রায়ই এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়।

ঈদকে সামনে রেখে শিল্পনগরী গাজীপুরের অধিকাংশ শিল্প কারখানা সোমবার (৮ এপ্রিল) থেকে ছুটি ঘোষণা করে। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে বেতন-বোনাস পেয়েই দ্রুত দেশের বাড়ি ফেরার গাড়ি পেতে মহাসড়কে আসে বহু শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। এতে গাজীপুর ও চন্দ্রার কিছু পয়েন্টে যানজট দেখা দেয়।

মহাসড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের শিথিলতা এবং হঠাৎ করেই ঈদযাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ায় এমনটা হয়েছে। তবে যানজট দূর করে যান চলাচলের গতি বাড়াতে তাঁরা তৎপর আছেন বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

টিকেট নিয়ে ভোগান্তি কী দূর হয়েছে?  

সোমবারের ট্রেনে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন ফাহিমা বেগম। সাথে তার পরিবারের তিন সদস্য। ফাহিমা আগেই অনলাইনে সোমবারের ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন।

ট্রেনে ওঠার আগে সোমবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সাথে। টিবিএসকে তিনি বলেন, “ট্রেনের টিকিট কাটতে আগে ঘন্টার পর ঘন্টা– এমনকি ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হতো। কিন্তু, এবারে সেই ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। অনলাইনেই টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছি এবং কমলাপুর রেল স্টেশনেও খুব বেশি ভিড় নেই। আশা করি সঠিক সময়েই ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে।”

শুধু দক্ষিণবঙ্গের নাজমুস সাকিব, কিংবা উত্তরবঙ্গের ফাহিমা বেগমই নয়– এবারের ঈদ ভ্রমণ দেশের সকল প্রান্তের মানুষের জন্যই অনেকটাই ঝঞ্ঝাট-মুক্ত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহাসড়কগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং বিশেষ করে দক্ষিণের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পদ্মাসেতু মানুষের ঈদ যাত্রার ভোগান্তি কমিয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে।

পদ্মাসেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকার সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকতো। এর ফলে লঞ্চের ছাদে যাত্রী উঠতো, এমনও হতো লঞ্চের খোন্দলে (মালামাল রাখার জায়গা) যাত্রীতে ভরে যেত। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল লঞ্চ চলাচল।

আর পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চের যাত্রী কমেছে। সড়কপথে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় বরিশালে পৌঁছাতে পারায় অধিকাংশ মানুষ সড়কপথেই বাড়ি যাচ্ছে।

পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদের কিছুটা আগে আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দেওয়া, রোস্টার চালুর মাধ্যমে গার্মেন্টসগুলোর ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ায় আরও নির্বিঘ্ন হচ্ছে ঈদযাত্রা। এছাড়া ঈদের সময়ে রাস্তায় পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা এবং তদারকিও মহাসড়কের বিশৃঙ্খলা ও যানজট কমিয়েছে।

সোমবারে যাত্রাপথের পরিস্থিতি যেমন ছিল

আগের বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রায় তেমন ভোগান্তি হয়নি বলেই জানান সড়কের যাত্রীরা। সোমবার পর্যন্ত ট্রেনের উল্লেখযোগ্য কোনো বিলম্বের ঘটনাও জানা যায়নি। অন্যদিকে, এবার লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়লেও, এখন পর্যন্ত তেমন ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও বড় ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উন্নয়নের ফলে এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করছেন। এমনকি ব্যাপক যানজটের জন্য পরিচিত চন্দ্রা মোড়েও যানবাহনের চাপ বাড়লেও– তুলনামূলকভাবে যানজটমুক্ত ছিল।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদযাত্রায় চন্দ্রা মোড়ে যানজট নেই, এ যেন অবিশ্বাস্য। প্রতিটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সরব উপস্থিতির কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব খান বলেন, “চন্দ্রার কাছে মহাসড়কে তিন শিফটে এক হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিশেষ কারণ ছাড়া চন্দ্রার কয়েক কিলোমিটার সড়কে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাইল, সাভার ও নবীনগর থেকে আসা বাস চন্দ্রা এলাকা পার হয়ে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে।”

এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারের দুই লেনের সড়ক নিয়ে সবার দুশ্চিন্তা থাকলেও এতে যান চলাচলে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার কথা জানা যায়নি।

যাত্রীরা জানান, টাঙ্গাইল অংশের মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজট পাননি তাঁরা। চিরচেনা যানজোটের মহাসড়ক এবার ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিয়েছে। তবে আরও দুইদিন বাকি রয়েছে ঈদের। এই সময়টাও সড়ক যানজট মুক্ত থাকবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তাঁরা।

বগুড়াগামী এক বাসচালক মঈন টিবিএসকে বলেন, “ঈদের আগে এই সময় মহাসড়কে ব্যাপক যানজট থাকতো। কিন্তু, সড়ক উন্নয়ন আর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবার যানজটমুক্ত। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর আশরাফ বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত কোথাও যানজট নেই। স্বাভাবিক গতিতেই পরিবহনগুলো চলাচল করছে মহাসড়কে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও কোনো ধরনের যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক রুটের যাত্রীরাও।

অন্যদিকে, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীচাপ বেড়েছে। তবে ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে রওনা হতে পেরে খুশি অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রীরা।

জানা যায়, গতকাল নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস-সহ দুয়েকটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গেছে। এছাড়া, নৌপথে ঈদযাত্রার শুরুর দিকে যাত্রী না থাকলেও, এখন কিছুটা বেড়েছে। সকালের দিকে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি লঞ্চ ৬০০ যাত্রী নিয়ে ভোলার ইলিশার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

চাঁদপুরসহ কাছাকাছি বিভিন্ন নৌরুটের লঞ্চগুলোও যাত্রী নিয়ে ছেড়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, হুলারহাট, বরগুনা, রাঙ্গাবালী, চরমন্তাজ রুটের লঞ্চগুলো টার্মিনালে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা লঞ্চে উঠে পড়েছেন। সব লঞ্চ নির্দিষ্ট সময়ে ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, যাত্রীচাপ বাড়লে– সে অনুসারে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনাও কমেছে:

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরের ১৫ দিনে দেশে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়, আর আহত হন ৫৬৫ জন।

সংগঠনটির পরিসংখ্যান মতে, ২০২২ সালের রোজার ঈদের তুলনায় গত ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে ১৮.২০ শতাংশ, আর প্রাণহানি ২১.১০ শতাংশ এবং আহত ৩৩ শতাংশ কম হয়েছে।

সংগঠনটি বলছে, গত ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৩৪১টি দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জন নিহত এবং ৬২০ জন আহত হয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের পরিস্থিতি এবং দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গত ঈদে দুর্ঘটনা কম হয়েছে, এবারের ঈদেও দুর্ঘটনা কম হতে পারে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৫ হাজারের বেশি সংখ্যক মানুষ। বাংলাদেশে বছরে সড়ক দুর্ঘটনা-জনিত জিডিপির ক্ষতি ৫.৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হয়। আর সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ।