নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এসিএস টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন ও উৎসব ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অন্তত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তারাব পৌরসভার বরপা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। রাত আটটায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কারখানার তিন শ্রমিক বলেন, প্রায় চার মাস ধরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন–ভাতা ঠিকঠাক দিচ্ছে না। কথা ছিল ঈদের আগে শ্রমিকদের সব পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ কারখানায় আসার পর শ্রমিকেরা জানতে পারেন, মালিকপক্ষ তাঁদের বেতন–ভাতা না দিয়েই কারখানা ছুটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে তাঁরা আজকের মধ্যে বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিক, পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, বিকেল পাঁচটায় কারখানা ছুটির পর হঠাৎ করেই কারখানাটির কিছু শ্রমিক ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা বেতন ও উৎসব ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মিছিল করেন। প্রায় ২০ মিনিট সড়ক অবরুদ্ধ থাকার পর শিল্প পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের আগামী রোববার বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের শান্ত করেন। তখন শ্রমিকদের একাংশ সড়ক ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। তবে কিছু শ্রমিক তখন কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেই শ্রমিকেরা মহাসড়কে নেমে এসে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন, পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় অন্তত ছয়জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে পরিচয় না প্রকাশের শর্তে তিনজন শ্রমিক জানিয়েছেন।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, শ্রমিকেরা মার্চ মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা পাওনা আছেন। আগামী রোববার শ্রমিকদের বেতন এবং সোমবার উৎসব ভাতা দেওয়ার কথা ছিল। শ্রমিকেরা আজ স্বাভাবিকভাবেই কাজে আসেন। কাজ শেষ করে হঠাৎই কিছু শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলার পেছনে কারখানার বাইরের একটি পক্ষ উসকানি দিয়েছে বলে দাবি এই পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলা হয়েছে। বিকেলে মালিকপক্ষ রোববারের মধ্যে বেতন–উৎসব ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়ার পর শ্রমিকেরা চলে যান। অন্ধকার হওয়ার পর একটি পক্ষ বাসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে। আমরা তখন তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তখন কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।’
এ ঘটনায় কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন অংশে যানজট তৈরি হয়। সন্ধ্যায় মহাসড়কটির কাচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত যানজট পোহাতে হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মহাসড়কের মইকুলী থেকে আউখাবো পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা গেছে।
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আলী আশ্রাফ মোল্লা বলেন, ‘শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের জন্য বিক্ষোভ করলে যানজট তৈরি হয়। আমরা সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।’