রমজান মাস মুসলানদের ইবাদতের মাস। রমজান মুসলমানদের হৃদয়ে আগমন করে রহমত হিসেবে। মুসলমানগণ যেন, যথাযথ আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতে পারে এর জন্য আল্লাহ বিতাড়িত শয়তানকে বন্দি করে রাখেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম হাদিস :১৮৯৯)
হাদিস বিশারদগণ উক্ত হাদিসের কয়েকটি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-
এক. কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম : ৪/৬)
আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ হলো, মানুষ পাপ করে দুই কারণে—১. তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে; ২. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)
দুই. আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি : ১০/২৭০)
তিন. ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘রমজানে শয়তান বাঁধা থাকে’ অনেকের মতে এর অর্থ হলো- মুসলমানরা যেহেতু রমজান মাসে রোজা রাখে, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে বেশি সময় কাটায়, তাই তাদের কুপ্রবৃত্তি দমিত থাকে, নিয়ন্ত্রণে থাকে, যে কারণে শয়তান তাদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তানকে আক্ষরিক অর্থে বেঁধে রাখা হয়, এমন নয়।’
শয়তান বন্দি থাকাবস্থায়ও মানুষ পাপ করে কেন?
হাদিস বিশারদগণ এরও কয়েকটি জবাব দিয়েছেন। এক. রমজানের আগের পাপের প্রভাবে মানুষ রমজানে পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তার প্রভাব বাকি থাকে। একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছু দূর পর্যন্ত চলতে থাকে। ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।
দুই. কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, খুব দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি: ৪/১১৪)
তিন. আল্লাহ তাআলা সুরা নাসে বান্দাদেরকে মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
চার. কেউ কেউ বলেন, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপাচার করে। (শরহুন নববি আলা মুসলিম: ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ুতি আলা মুসলিম: ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি: ৪/৩২৭)